নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র বিরুদ্ধে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডব শুরুর দুইদিন আগে থেকেই পরের দিন পর্যন্ত ইউএনও রোজী আকতার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে যথেষ্ট গাফিলতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণে ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ অনেক পরিবার ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা করছেন। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে চলছে নানা আলোচনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ৯ নভেম্বর শনিবার পিরোজপুরসহ দেশের ১৫ জেলা প্রশাসককে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলা এবং ঝড় পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। সে আলোকে ওই দিনই ওই সকল জেলাসহ জেলার উপজেলা গুলোতে জরুরী প্রস্তুতি মুলক সভা শেষে কট্রোল রুম চালু করা হয়। কিন্তু ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার কোন প্রকার ছুটি ছাড়াই নাজিরপুরের ইউএনও রোজী আকতার কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবের পর রবিবার বিকেলে তিনি কর্মস্থলে উপস্থিত হন। একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাছাড়া ইউএনও কর্মস্থলে না থাকায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি তদারকির দায়িত্ব পালন করেন পিরোজপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) রামানন্দ পাল। তিনি নাজিরপুরে এসে কর্মস্থলে থাকা অফিসারদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস কক্ষে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন এবং সার্বিক খোঁজ খবর নেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইস্রাফিল কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে প্রস্ততিসভাসহ কন্ট্রোল রুম চালু এবং ঝড় পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তবে ইউএনও’র কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন রেখে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল সংক্রান্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো চিঠি গুলোতে ইউএনও’র পূর্বের দেয়া স্বাক্ষর স্ক্যান করে ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইস্রাফিল।
উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীল অনেক রাজনৈতিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দুর্যোগ চলাকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ইউএনও কর্মস্থলে না থাকায় ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে উপজেলায় যে পরিমান ঘরবাড়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত, পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি, গবাদিপশু-হাঁস-মরগীর মৃত্যু, মৎস্য খামারীদের ক্ষয়ক্ষতি, কৃষকদের সবজি, বীজতলা ও ধান ক্ষেতের যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার পরিমান ও তালিকা দায়সারা ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এ কারণে প্রকৃত ক্ষতির পরিমান উল্লেখ না হওয়াসহ অনেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাই অনেক ক্ষতিগ্রস্থরাই সরকারীভাবে ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।
এঘটনার পর স্থানীয় সাংসদ গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত মঙ্গলবার নিজ উপজেলা নাজিরপুরে পৌছে ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নেন এবং সকলকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি জেলা প্রশাসকসহ ইউএনওকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করে পুনরায় ক্ষতির পরিমানসহ ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করা নির্দেশ প্রদান করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো, ইস্রাফিল জানান, ইউএনও না থাকায় তার সাথে মুঠোফোনে যোগযোগ করে তার নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরের অফিসারদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সে তথ্য অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাছাড়া পিরোজপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রামানন্দ পাল নাজিরপুরে এসে সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজী আকতার এবিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে জানিয়েছেন দাপ্তরিক অনেক কাজেই তার স্ক্যান করা স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।